Saturday, 25 February 2017

লীনা গাঙ্গুলীর প্রেম(৩)


- মণি জুয়েল(Moni Jewel)

রাত 1:30 ।
চোখ জুড়ে আসছে ঘুমে আমার, তুমি ঘুমাবে না- লীনা বলে উঠলেন
সাগর বললো- কে মিস্ড কল করলো দেখি
নোকিয়া 1100সেটটা ভাইব্রেশনে ছিলো বলে লীনা শুনতে পান নি ।
- কে আবার এতো রাতে? কতজনের সাথে তোমার কথা হয় গো!!! যত্তসব। সব পুরুষ তোমরা একই ...
বলতেই থাকলে,
লীনার কথায় সাগর ভ্রুক্ষেপ না করে ওই নম্বরে রিঙ ব্যাক করে কথা বলতে বলতে ছাদে উঠলো। বেশ কিছুবার আসা যাওয়ায় লীনার বাড়িটার পরিচিতি বেশ ভালোই সাগরের কাছে ।
কথা বলে সে যখন নামছিলো তখন লীনা দেবী মনের আঁশ মিটিয়ে মাঝরাতকে জাগিয়ে তুলছিলেন!
- এই জন্যই তোমাকে সে ছেড়ে গেছে"
এ কথা বলেই থেমে গেলো সাগর ।
লীনা তাকিয়ে থাকলেন বড় বিস্ময়ে। তিনি আশাই করেননি সাগরের কাছে এমন কথা। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী সত্যিটা সাগরকেই বলেছিলেন লীনা দেবী। সাগরও তা জানে খুব ভালো করেই। তবুও একটা অশান্ত কথা মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো । সাগরও ভালো করে জানে এর জন্য তারও দায় কম নয়। মেজাজ বিগড়ে সেও ভুলে গেছিলো, আরো ভুলে গেছিলো সমালোচনা শোনার পাত্রী সে নয়।
- শোনো, ওই প্রদ্যুৎ ছোঁড়া বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, ওর মা শ্বেতা'ই ফোন করেছিলো। একটু হাসপাতালে যেতে হবে, ট্রান্সফার না কি করতে হবে বলেছে"- একটু থেমে থেকে কথাগুলো সাগর বললো।
ওষুধের ব্যাবসার সাথে যুক্ত থাকায় ডাক্তার,হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলোতে পরিচিতি ভালো থাকায় এমন অনেক আবদারই রক্ষা করতে হয়। 
- যাও ।
শুধু এই একটি শব্দই লীনা দেবী বললেন ।
লীনা জানতো শ্বেতা সাগরের সাথে পড়াশুনা করেছে, ওরা বন্ধু । শ্বেতার বরও ওর বন্ধু। সাগর বলেছে।

সে যাই হোক সে রাতে লীনা দেবীর ঘুম আর হয় নি । সারারাত শুধু ওই একটা ভাবনাই মনকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো, সেই একটা কথায় মনে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। চোখের কোন বেয়ে কয়েকফোটা জল ঠিক পৌঁছে গেছিলো গাল বেয়ে বালিশে। কত কত কথাই না তার মনে পড়ছিল! মনে মনে হয়তো ভাবছিলেন- মনের খবর বুঝি মন ছাড়া ভালো কেউই বোঝেনি কোনোদিন।

ভোর হতে না হতেই ফোন করলো সাগর, জেনে নিলো মন ভার না কি । বেশ কয়েকবার নিজের ভুল স্বীকার করে ফোনে একটা আলতো চুমু দিয়ে সকালটা সফল করে তুললো। আর কোথাও অভিমান মান নেই! 
সাগর একটু হাসলো
লীনা দেবী বললেন- রাতে তো ঘুমাও নি, চান করে ফ্রেশ হয়ে নিও
- তুমিও
হাসতে হাসতে একট সুন্দর দিনের শুরু হলো।

তখন বিকেলে 4টে হবে। লীনা তখন গানের রেওয়াজ করছিলেন। পুরোনোদিনের অভ্যেস। বেশ সুখ্যাতিও আছে তার। এক সময় জেলা থেকে রাজ্যস্তরে উঠে গেছিলেন। 
হঠাৎ সাগরেরে ফোন-
-এই জানো লীনা, আমার উপন্যাসটাও এবার প্রকাশ করছি
- তা তো রোজই বলো, এ আর নতুন কি? কতবার বলেছি করো করো...
- আরে এবার দেখোই না
- প্রকাশ করো তোমার সেক্স সেক্স কথা । সমালোচনার শেষ থাকবে না বলে রাখলাম" লীনা বললেন। 
- তুমি কি জানো সেক্স ছাড়া সৃষ্টিই অচল?
- রাখো তো তোমার ভাববাদী কথা।  হাসতে হাসতে বললেন লীনা দেবী
সাগর বললো- বইটা কিন্তু তোমার নামেই প্রকাশ করবো
-মানে? অবাক বিস্ময়ে বললেন লীনা দেবী
সাগর শুধু বললো - হ্যাঁ তাই।
- তোমার লেখা আমার নামে প্রকাশ করবে কেন? ও তো তোমার সৃষ্টি
- তুমি কি জানো লীনা আসলে আমি নতুন জন্মেছি তোমায় অনুভব করার পরে। তোমায় ভালোবেসেই আমার কবিত্ব, তোমার প্রেমেই আমি কবিতার বই প্রকাশ করে কিছুটা হলেও কবি পরিচয় পেয়েছি । সবই তোমায় ভালোবেসে। এতো কিছু তুমি দিলে আর আমি এটুকু পারবো না? থামলো না বলেই গেলো মনের কথাগুলো-
একটা সময় সময় ছিলো আমি একটু ভালোবাসা খুঁজতাম, একটু স্নেহ খুঁজতাম,  একটু হৃদ্যতা খুঁজতাম কৈ কেউই তো দেয় নি! কিন্তু তুমিই আমাকে পূর্ণতার দরজায় ঠেলে নিয়ে গেছো। এ কি আমি ভুলতে পারি?
লীনা বললেন - শোধ করতে চাও তাহলে?
সাগর বললো- যেখানে ঋন থাকে সেখানে শোধ এর কথা আসে, প্রেম তো ঋনের বস্তু নয় লীনা । তুমি হাজার চেষ্টা করলেও পারবে কি যাকে ভালোই বাসো না তাকে দয়া করে একটু ভালোবাসা দিতে? পৃথিবীর সব মা কি তার মমতা ঋন দেয়? পৃথিবীর সব প্রেমীকার ভালোবাসা দিয়ে ঋনি করে? মনে রেখো শুধু প্রেমে মায়া মমতা নয় যৌনতাও ঋন দেওয়া যায় না। ওগুলোর মালিকানা কোরোরই নয়। ওগুলো সবই স্বাধীন। কারো অধীন নয় ও সব। তুমি জোর করে সৃষ্টি বা ধ্বংয করতেই পারো না।

অন্য রকম একটা দার্শনিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে
লীনা দেবী তার আপন কায়দায় বলে দিলো - রাখো তোমার ফিলোসফি! তুমিই বলো তুমিই শোনো।  মাথা খারাপ কোরো না তো, আমি বাথরুম যাবো ।
" উমমমমা" শব্দে একটা চুমু দিয়ে একটু আড়মোড়া দিয়ে একটু হেসে ফোনটা কেটে দিলেন।
                                *ধুলিয়ান,  মুর্শিদাবাদ

No comments:

Post a Comment