- মণি জুয়েল
কবিতার প্রতি লীনা গাঙ্গুলীর খুব প্রেম। এই সুত্রে অনেক কবির সাথে বেশ ভালো পরিচয়ও আছে। লেখালেখিও করে থাকেন একটু আধটু। যতটা লেখালেখি করেন তার চেয়ে কাব্যবিজ্ঞতার আধুনিকতার প্রকাশ বেশি করেন কথায় কথায়! সব শেখার মাঝে একটা বিষয় শিখতে ভুলে গেছেন মাত্র । তা হলো সমালোচনা গ্রহণ করার শিক্ষা । মনুষ্যত্বের কথা বলেন, মন্দিরে যান, ক্লাবে যান, মায়াপুর আসতে ভালোবাসেন, কফিশপে আড্ডা দিতে ভালোবাসেন, একটু সময় পেলেই নন্দন চত্বরে কবি সমাবেশে হাজির হন ।
সেদিন ছেলে মেয়ে সাথে খাজুরাহ মন্দির দর্শন করে ফিরলেন । এমনিতেই শেষ চৈত্রের দুপুরের গরম, তার উপরে ট্রাভেলের ক্লান্তি। মনটা বড় বিস্বাদ যেন! উচ্চাকাঙ্খী অভিলাষী মহিলার মন খারাপেও কেমন যেন লাস্যের ছোঁয়া থাকে। ক্লান্ত ঠোঁটে কয়েকবার ভেজা জিভ বুলিয়ে নিয়ে এনড্রোয়েড টা অন করলেন । তরুণ বন্ধু সাগরের সাথে চ্যাট করবেন ভেবে । অন আছে দেখে গদগদ মনে মেসেজ লিখলেন-
-হাই সোনু
-আমি এসে গেছি
-বড্ড মন খারাপ জানো?
অন থাকলেও কোনো রিপ্লায় না পেয়ে বিরক্ত হয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে কি যেন বললেন, মোবাইলটা পাশে ঠেলে দিয়ে এলিয়ে দিলেন নাদুস শরীরটা। বয়স 45 হলেও শরীরের গঠনে এখনও যৌবনের প্রাণবন্ত শিল্প বেঁচে আছে। তা নিয়ে লীনা দেবীর গর্ব প্রকাশ পায় কথায় কথায়, সুপ্ত থেকে যায় অহংকারটুকু ।
চুলের খোপার বাঁধন খুলে চোখটা বন্ধ করে আরামের চেষ্টা করতে গিয়ে ঘুমটা একটু এসেই গেছিলো
কুরুং কুরুং করে বেজে উঠা মেসেঞ্জার কলে ঘুমটা ভেঙে গেলে, মুখটা একটু কেমন করে দেখলেন কে করেছে কল। হঠাৎই বদলে গেলো মুখের আদল, বেশ খুশি হয়ে মুখে একটু দুষ্টুমির ছলে কল কেটে দিয়ে মেসেজ লিখলেন
-স্নানে যাচ্ছি পরে কথা
রিপ্লায় এলো- আসছি বাথরুমে
-ইসসস্
এ কথা লিখে রিপ্লায়ের অপেক্ষা করছেন এমন সময়
মেয়ে এসে বললো
-তোমার এতো ফেসবুক ফেসবুক কেন গো? রান্না করবে না কি?
স্ক্রিনে ভেসে উঠলো - "কি হলো"
আর কোনো কথা না বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে গেলেন লীনা দেবী ।
বিকেলেই ছেলে প্রিতম আর মেয়ে অনিতা চলে গেলো ওদের হোস্টেলে। ছেলে সাঁঝে হাওড়া থেকে ট্রেন ধরবে। মেয়ে গেলো উত্তরবঙ্গে।
ছেলে মেয়ে চলে গেলে জানালায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ শূন্য মনে ছিলেন। চোখের কোনে আনমনে গড়িয়ে পড়েছে।
জীবনে সবই হারিয়েছেন তিনি, পাওয়া বলতে শুধু ছেলে মেয়ে। হারাতে হারাতে সংগ্রাম করতে করতে মানুষটট কিছুটা একঘেয়ে হয়েই যায়! এই কারণেই অনেক সময় অকারণ তর্কে জড়িয়ে পড়েন বন্ধুদের সাথে।
এককাপ চা আর একাকিত্ব সাথে নিয়ে ডাটা অন করতেই বেশ কয়েকবার টিং টং বেজে উঠলো।
দেখলেন- সাগর মেসেজ করেছে, কিন্তু সে এখন অন নেই। তাই রিপ্লায় না দিয়ে লেখাগুলো পড়তে শুরু করলেন । শেষমেষ বিরক্ত হয়ে "মন ভালো নেই" একবাক্যের একটি ফিলিং স্যাড স্ট্যাটাস দিয়ে অফ্ হয়ে গেলেন।
তখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা সাগরকে ফোন করলেন লীনা গাঙ্গুলী।
ফোনটা রিসিভ করতেই বেশ কিছুটা তীক্ষ্ণতা মাখিয়ে ঝাঁঝিয়ে লীনা বলে উঠলেন
- তোমার কি কোনো খেয়ালই নেই, একটু খোঁজ নিতেও সময় হয় না তোমার?
বয়সে ছোট হলেও সাগর ঠিকই দক্ষতার সাথে হাস্যদুষ্টুমির পরিবেশ ক্রিয়েট করে নিলো আপন কবিত্ব মেশানো ঢং এ
কফি খাবে না চা? লীনা দেবী বলে উঠলেন
সাগর বললো- আজ একটু চাপে আছি, দেখি সময় হয় কি না
আসতে হবে না - এই বলে ফোনটা লীনা' কেটে দিলেন।
No comments:
Post a Comment