Thursday, 23 February 2017

লীনা গাঙ্গুলীর প্রেম(২)

- মণি জুয়েল(Moni Jewel)

ছেলে মেয়েকে ফোন করে খবর নিয়ে লীনা দেবী চুপচাপ বসে ছিলেন। রাত 9:50 বেজে গেছে, রান্নাবান্না খাওয়ার কোনো অনুভব করছেন না।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে আনমনে কি যেন ভাবছিলেন, ফোনটা বেজে উঠলে নিরবতা ভাঙলো।
- কি করছো, আমি আসছি, পেট্রলপাম্পে আছি
কোনো কথা বলেই লীনা সাগরের ফোনটা কেটে দিলেন। চুপচাপ বসে থাকলেন ।

রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ডোর রিং বেজে উঠলো। কৃষ্ণের আগমনে রাধা যতটা না আপ্লত হয়েছিলো অথবা কৃষ্ণের বাঁশিতে যতটা মাদকতা ছিলো তার চেয়েও বেশী মাদকতায় আচ্ছন্ন দুই পা আপ্লুত হৃদয় এগিয়ে চলেছে দরজা খুলতে!
খেয়ালই নেই শাড়ির আঁচল ঠিক আছে কি না, কে এসেছে তা জানারও কোনো তাড়া নেই! ধরেই নিয়েছে সাগরই এসেছে।
হেলমেট হাতে সাগর দাঁড়িয়ে আছে । লীনা দরজা খুললেন ।
দক্ষিণা বাতাস বয়ছিলো, আনন্দঘন অথচ অবসন্ন মুখের উপরে কয়েকটা চুলের খেলে যাওয়া তরঙ্গে সাগর তাকিয়েই আছে
- কি হলো, এতো ঢঙ কোরো না তো
- হা: হা: চলো" সাগর হেসে বললো
- ফ্রিজে মনেহয় কোল্ডড্রিঙ্ক আছে, খেলে খাও, আমি রান্না বসাই
- আরে না না আমি ফ্রাই নিয়ে এসেছি তো
- ধুস,,, ও আমি খাবো না, কয়দিন বাইরের খাবার খুব খেলাম
- তাহলে রুটি করো, বেগুন ভাজা, আর নাও এগুলো রেখে দাও তবে
লীনা সাগরের হাত থেকে খাবারের ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলেন ।

মুখহাত ধুয়ে ঘরে আসতেই সাগর দেখে লীনার মোবাইলে কার ফোন এসেছে। গিয়ে দেখে, অনীতা ফোন করেছে। নিয়ে গিয়ে রান্নাঘরে সাগর দিয়ে এলো ফোনটা।

মেয়ের সাথে লীনা কথা বলছিলেন -
- হ্যাঁ পৌঁছেছিস?
-হ্যাঁ, তুমি কি খেয়ে শুয়ে গেছো?
- না রে
- খাও নি? আজ তো অনলাইনেও দেখছি না!
- না যাওয়া হয় নি, দেখি খেয়ে যাবো
- অনেক রাত হলো মা, খেয়ে ঘুমাও, বেশী রাত জেগো না
- রুটি করছি রে, জানিস তোর সাগর দা এসেছে
-হু...  ভালো থেকো। ও হ্যা... সাগর স্যর চলে গেলে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যেও, বেশী রাত জেগো না। প্রিতম তোমাকে সকালে কল করবে বলেছে ।
-হ্যাঁ সকালে তুলে দিতে হবে মাকে? নিজে নিজে জাগতে শিখবি না?
- মা তুমি আছো না?
- আচ্ছা ঘুমা
-হু...  ভালো থেকো। ও হ্যা... সাগর স্যর চলে গেলে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যেও, বেশী রাত জেগো না। প্রিতম তোমাকে সকালে কল করবে বলেছে ।
এই বলে অনীতা ফোনটা কেটে দিলো।

প্রিতম না জানলেও অনীতা ঠিকই জানে মা'র সাথে সাগরের সম্পর্ক। এটাও জানে রাতে সাগর যাবে না, এর মা তাকে যেতেও দেবে না। তবুও নিজেকে আড়াল করতেই শেষের কথাগুলো বলা । মনে মনে মেনেও নিয়েছে তার মা ও তার সাগর স্যরের সম্পর্ক।
আগে সাগর দা বলতো, এখন সাগর স্যর বলে। উচ্চমাধ্যমিকে বাংলার কিছু নোট পেয়েছিলো। ওটাই স্যর বলতে সাহায্য করেছে হয়তো। তবুও কি সব প্রকাশ মেনে নেওয়া যায়?
মা কে ও খুব ভালোবাসে, দেখেছে  ওরা দুইভাইবোনের জন্য মায়ের আত্মত্যাগ ।
এই তো সেদিন এখানে বিএড করতে ভর্তি করাতে কত সমস্যার মধ্যেও মা ঠিক জোগাড় করে নিয়েছে । সব মেনে নিয়েও কোথাও কেমন একটা কিন্তু ভাব আছেই!

রান্না সেরে একটু হাতমুখ ধুয়ে লীনা সাগরকে একবার দেখে গেলেন । সাগর তখন কার সাথে মেসেজ চ্যাট করছিলো। একটু রাগ হলেও কিছু না বলে চুপচাপ থেকে গেলেন ।
এই দেখে সাগর বলে উঠলো -
রান্না হলো কি তোমার? মাঝরাতে রুটি খাবো তো---
বলতে বলতে হেসে দিলো
- চ্যাট করছো চ্যাট করো, তোমার সাদা গোলাপ, নীল গোলাপ, বসন্তের ফুলদের সাথে
- আচ্ছা আচ্ছা চলো, খেতে দাও" সাগর বললো
দুজনে উঠে খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসলো । খাওয়ার রাখা ছিলো।
খেতে খেতে গল্প হতে থাকলো কাব্য, ভাব, প্রকাশ, গল্প সাহিত্য প্রেম যৌনতা নিয়ে। শেষ বসন্তের মাঝরাতে দুইজন হৃদয়ের মানুষ পাশাপাশি। বয়স কোনো বাঁধায় নয় যে আন্তরিকতায়। কারো খেয়ালই কে বড় আর কে বয়সে ছোট।

No comments:

Post a Comment