- মণি জুয়েল(Moni Jewel)
শরীরটা দিন চারেক থেকে সমিরের ভালো যাচ্ছেনা, আবাহাওয়া পরিবর্তনের কারণে গায়ে ব্যথা-জ্বর জ্বর ভাব | চারদিন পরে আজ একটু সুস্থ মনে হচ্ছে , ঘুম থেকে উঠলো সকাল আধা দুপুর দশটায় | শরীর সুস্থ হলেও মনে খুব একটা শান্তি নেয়,চেহরায় সেই লাবণ্য নেয় | মাস দুয়েক থেকে ওষুধের ব্যাবসার অবস্থার অবণতি হচ্ছে, হাতে তেমন অর্থ ও নেয় |
সকালের কাজ সেরে হাতে ব্রাশ নিয়ে আনমনে কি যেন আকাশ-পাতাল ভাবছে ঠিকানা নেয় | সহসা দিপেনের স্ত্রী এসে হাজির ---
কথা বলার থেকে কান্নায় যেন বেশি,--ই রে ব্যাটা হামি মাস খানিক হনে বুকের বেদনায় ম ইরা যাছি, কয়দিন মে ঙে আইনা জমাইছিনু, সব চুরি করে করে লিছে ' এই বলতে বলতে কান্না শুরু করে দিলো | মনটা খারাপ থাকার দরুন সমির খানিক রাগের সুরেই বললো -তোদের কি হবে না হবে আমাকে শোনাতে আসিস কেন!! তোরা মরবি-বাঁচবি আপনা দেখগে! আমি কি করবো!!
দুর থেকে কথাগুলো সমিরের মা- আহসানা শুনছিলেন…তিনিই দুর থেকে ডেকে বললেন ওগো ..কমলা এই দিকে আই |
আহসানা জি খুব সমাজের দীনদের ভালোবাসেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করেন তাদের সাহায্য |
যেমন মা তার তেমন পুত্র !
তিনি বিষয়টা শুনলেন, ভাবলেন খানিক পরে কমলাকে আড়ালে ডেকে বললেন বললেন সমিরেরে বর্তমান অবস্থার কথা | আর তাতে কমলার কান্না আরো যেন বেড়ে গেলো |
এই কান্না বেড়ে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ ও আছে -সমির এই এলাকার বেশ নামি ছেলে, বয়স কম হলেও সমাজে ভুমিকা বেশ ভালোই, নিজের পকেট…সময় দরিদ্র জনের সেবায় খরচ করতে বেশ বাহাদুর আর এই কারণেই কত নেতার সাথে যে যোগাযোগ তার ঠিক নেয় | সাধারণের সমস্যার কারণে কত নেতা, দলের সাথে যে তার ঝগড়া তার ও ঠিক নেয় | তবুও এলাকার প্রায় সব নেতা,দল তাকে খুব ভালোওবাসে |
সমিরের মায়ের বিবরণ শুনে কমলা কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো --ই বাবা আইজ তো শুক্কুরবার তুমি এক-জারা মহজিদে(মসজিদ) ব ইলা দাও, হামি চাঁদা হনে টাকা লিয়া ডাক্তর দেখাবো |কিছু সময় চুপ থেকে আবার বললো:-ও..হামার বাপ তো ফের ধম্ম মানেনা !
-তাও হামার লেইগা এক-জারা ব ইলা দেও না বাপ |
হায়রে!! রাগে যেন আরো জ্বলে গেলো সমিরের গা, তবু রাগ না দেখিয়ে হাসি মুখেই বললো---ওরে ওই কমলা তুই ভাবলি কেমন করে যে আমি মসজিদে গিয়ে চাইতে বলবো? মসজিদে যারা তোকে চাঁদা দেবে তারা রোজ-প্রতিনিয়ত তোদের-সকলের ডাক্তার-ওষুধের খরচের একপ্রকার চাঁদা দেন, ও..তুই বুঝবিনা ,ছাড় | আমি ফোন করছি ব্যানার্জি ডাক্তারের কাছে যা হাসপাতালে, কিছু পয়সা দিবিনা, আর মিনারের দোকানে ওষুধ কিনবি, আর ছবি তুলতে বলবে হাসপাতালেই তুলে নিবি |
এই কথা শুনে কমলা যেন খানিক সুস্থ হয়ে উঠলো |
বললো---হামাদের আশীর্বাদ তোমাকে অনেক বড় করবে রে বাবা |
সমির বললো -তোদের ভালো হবে তো আমি বড় হলে??
কমলা চলে গেলো |
আমাদের সমাজে কত কমলা যে এমন আছে , রোজ মরছে তার ঠিক নেয় | কখন কমলারা ভালো থাকবে! এমনই শত কথা ভাবতে ভাবতে হঠাত্
একটা বড় শ্বাস মনের অজান্তে বেরিয়ে গেলো!
2015.02.27/ Dhuliyan/01:00PM
No comments:
Post a Comment