মুর্শিদাবাদ ইউনিভার্সিটি চালু হতে যাচ্ছে। কিন্তু উপমহাদেশের পুরোনো ব্যারাম এখনও সারলো না!
মুর্শিদাবাদ জেলায় মুসলমান মানুষের বাস বেশি। এবং সেই ইংরেজ আমলের ভারতবর্ষের মতোই যেখানে মুসলিম বেশি সেখানে বঞ্চনা একটু বেশি, এখনও। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর একটা ভালো উন্নত স্থান যদিও উত্তরের পথে বাসের যোগাযোগ খুব খারাপ, রাস্তা এখন ভালো। বহরমপুর সদর শহরে মুসলিম সংখ্যা তুলনায় কম। এখন যদি মুসলিম সংখ্যা একটু বাড়তে যাচ্ছে, তো খবরে আপনারা পড়তে পাচ্ছেন- মুসলিমদের ঘর ভাড়া দিতে বাঁধা আসছে। উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা চলছে। যদিও খুব একটা বেশি এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসে নি, তবে সুপ্ত গুপ্ত মুসলিম বিদ্বেষ আছেই, এটাকে যত মুসলিম বিদ্বেষ না বলে ইসলাম বিদ্বেষ বলা যায়।
সেই বহরমপুরেই মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৪ টা বিষয়ে পঠন পাঠন হবে। এটা খুব খারাপ না। কিন্তু ওই যে বললাম পুরোনো ব্যারাম! অন্যান্য সাবজেক্টে ২৫ থেকে ৬০ টা পর্যন্ত সিট থাকলেও, সংস্কৃতএ ৮০ টি। আর আরবী বিষয়টিই নেই!
অনেকে ধর্মীয় কারণে আরবী চাইলেও আমি চাইছি আন্তর্জাতিক কারণে। কারণ আরবী ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা। বর্তমান পৃথিবীর পাওয়ারফুল ভাষাগুলোর একটি। এছাড়াও আমাদের দেশের অনেক অনেক মানুষ আরবী ভাষাভাষী দেশ সমূহে গিয়ে জীবন জীবিকা চালাচ্ছেন। এমনকি আমাদের দেশ সেইসব আরবী ভাষার দেশের সাথে বিভিন্ন ধরণে যুক্ত, এবং সুসম্পর্কে আবদ্ধ। আরবী ভাষা নিঃসন্দেহে ভারতীয় দেরকে আন্তর্জাতিক মানে আরো উন্নীত করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া ভারতের ইসলাম এদেশের একটা বড়ো পাওয়ার, সেই ইসলামকে জানতে হলে ভারতীয়দেরকে অবশ্যই আরবী জানতে হবে। ইসলামকে জানা উপেক্ষা করে কোনোভাবেই আমাদের দেশের অগ্রগতি সম্ভব না। আরবী ভাষাভাষী দেশগুলো বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার একটা বড়ো অধ্যায়। আর ইসলাম একটা আন্তর্জাতিক বৃহৎ মতাদর্শ। তার পক্ষে বা বিপক্ষে বলার জন্য তার নিজের ভাষা আয়ত্ত করা দরকার।
ধর্মের কথা না বলতে না চাইলেও কিছু ধর্মীয় কথা চলে এলো!
প্রশ্ন আসবে কারা সাবজেক্ট গুলো নির্ধারণ করলেন, তাদের ভাবনার দৌড় কদ্দুর, পরামর্শদাতাই বা কারা, তাদের চিন্তাই বা কতটা কি, তারা আরবী বাদ রাখলেন কেন, সংস্কৃতে তুলনায় বেশি সিট কেন, কাদের স্বার্থে, এই সাবজেক্ট কি মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে??
যাইহোক... আমি মনে করি সংস্কৃত ভাষার চর্চা দরকার, ভূখণ্ড ও তার আশপাশের ভূখণ্ডের ইতিহাস জানতে। কিন্তু পালি প্রাকৃত ভাষা কি দোষ করলো? দেশকে জানতে এসব ভাষা জানাও ভীষণ দরকার। যে রিপাবলিকানইজম এর এখন বাজার সেই রিপাবলিকানইজম ভালোভাবে জানতে প্রাকৃত পালি ভাষা বুঝতেই হবে।
উপরের এই আলোকে কেউ তো আক্ষেপ করে বলতেই পারেন যে, দেশের পুরোনো ব্যারাম এখনও সারলো না। কি সেই ব্যারাম? ব্যারাম হলো মুসলমান বিদ্বেষ। কারণ মুসলমানের ছেলে মেয়েরাই বেশি আরবী পড়তে চান, কারণ তাদের প্রধান বই আরবী ভাষার। সেই আরবী বিষয় রাখা হলো না, অন্যদিকে সংস্কৃত হাইলাইট করা হলো। যে সংস্কৃতকে সাধারণভাবে বলা হয় হিন্দু (ধর্ম অর্থে)ভাষা।
আমি মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক ছাত্রছাত্রীকে জানি যারা আরবী বিষয়ে কাছাকাছি উচ্চশিক্ষা না পাওয়ার কারণে বেশিদূর আর এগিয়ে যেতে পারেন নি দারিদ্র্য। এমন অনকেকে জানি যারা বাইরে গিয়ে পড়তে বাধ্য হন। আমি নিজে দেখেছি অনকে ছাত্র ছাত্রী আমাদের ইউনিভার্সিটি এসেছেন পড়াশুনা করতে, আমি বাইরে পড়াশুনা করেছি এবং আমাদের ইউনিভার্সিটিতে আরবী সাবজেক্ট ছিলো। এমন কিছু স্টুডেন্টকে জানি যারা সপ্তাহে দুদিন তিনদিন ক্লাস করতো, বাইরে থেকে পরাশুনা করতে পারবে-না বলে। তাদেরই মুখে শুনেছি ভোররাতে(৫am) বাড়ি থেকে বেরিয়ে ক্লাস করে বাড়ি ফিরতো এশা(৮pm)র সময়। এই ছাত্রছাত্রীদের নিজের জেলায় ইউনিভার্সিটি হবে আর আরবী সাবজেক্ট চালু হবে না, এটা খুব দুঃখজনক।
এতো কিছুর পরেও ভালো খবর বঞ্চিত জেলার মানুষরা একটা University পেলেন। এই ইউনিভার্সিটি আগামী দিনে ছাত্রছাত্রীর এমন প্রসার ও বিকাশ ঘটাক তা যেন ভারতবর্ষ ভূখণ্ডকে আলোকিত করে। ভূখণ্ডকে নতুন দিশা দেখাক। এবং অবশ্যই সাম্প্রদায়িকতা ধ্বংস হউক। বিদ্বেষ ধ্বংস হউক।
ভাবতে ভাল্লাগছে, আমার জেলার ছেলে মেয়েরা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করবে। JNU, AMU, Jamia- র ছাত্রছাত্রীরা যেমন এখন দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেদেরকে আন্দোলনের পথে নিয়ে গেছেন, তেমনি আমার জেলার ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরাও আগামী দিনে দেশের মানুষের স্বার্থে আন্দোলন সংগঠিত করবে, দেশকে আরও উন্নতির পথে নিয়ে যেতে তারা পায়ে পা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটবে। তাদের ঘামে, তাদের মেধায়, গড়ে উঠবে আরো উন্নত সমাজ। @মণি জুয়েল
No comments:
Post a Comment