Saturday, 27 May 2017

প্রবন্ধ

প্রেম, যৌনতা, কবি এবং কাব্য
_ মণি জুয়েল

আমাদের সমাজে এখন যৌনতা এক গোপন ব্যপার | গোপন থাকাই ভালো | তবে তার প্রকাশ আরো ভালো তা যদি শিল্প মিশিয়ে প্রকাশ হয় | পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির মাঝে সবচেয়ে যা সুন্দর.সৃষ্টি তা হলো নারী | যেমন উদ্ভিদ জগতে সবচেয়ে সুন্দর হলো ফুল | তাই তো জ্ঞানী সমাজ ফুলকে নারীর সাথে নারীকে ফুলের সাথে তুলনা করে থাকেন | ফুল ছিঁড়ে নিলে যেমন অল্প সময় পরে তার সৌন্দর্য্য ঝরে পড়ে তেমনি নারীর.বেলাতেও সমান যত্ন নেওয়া দরকার তার সৌন্দর্য্য সুখ নিতে | ফুলের যেমন একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে প্রস্ফুটিত হবার তেমনি নারীরও |
নারী সবচেয়ে সুন্দরী দেখায় 90শতাংশ নগ্ন অবস্থায়, যেমন ফুল! 
আর এই সৌনদর্য্য উপভোগ করার জন্য আদর্শ মন দরকার |

আমরা যদি খুব ভালো করে লক্ষ্য করি কোনো নারীর স্নানের সময়গুলো তাহলেই বুঝতে পারবো তার সৌন্দর্য্য | নারীকে সবচেয়ে সুন্দরী দেখায় উল ঙ্গ(প্রায়) অবস্থায় স্নান করার সময় | ঠোঁট বেয়ে থুতনি দিয়ে জল গড়ানো, সেই জল বয়ে যায় দেহ.বেয়ে | স্তনের বৃন্ত তখন যেন তরতরে আ ঙুর! সরু কোমরের যে বাঁক তাতে জলের এক অসাধারণ খেলা, কচি বাঁশের দুই বাঁকা গিঁটের সন্ধিস্থানের মতো হাঁটুর উপরি অংশ, আর কামনার নিবিড় অঙ্গ নিতম্বের আসল সৌন্দর্য্য সেই স্নানেই লক্ষ্য করা যায় | যাই হোক আমার আলোচনার বিষয় আজ তা নয় |

450খৃ:(আনুমানিক) আরবি সাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি ইমরুল কায়েসের জন্ম | তাঁর আসল.নাম আবু হারিস হুন্দুজ ইবনে হুজ্র আল কিন্দি | কবির স্বভাবগত কারণে তার নাম 'ইমরুল কায়েস, যার বাংলা_ অটল পুরুষ | তাঁর ভবঘুরে জীবন যাপনের জন্য তাকে 'ভবঘুরে যুবরাজ'ও বলা হয়ে থাকে |
তিনিই প্রথম আরবী কবি যিনি  চঞ্চলা হরিণী এবং বন্য গাভীর সাথে নারীকে অসাধারণ ভাবে তুলনা করেছিলেন | সৌন্দর্য্য বর্ণনা ও তার গুনকীর্তন, নারী, রাতের বেলার দৃশ্য, বাতাস এবং বৃষ্টির যেমনভাবে চিত্রিত করেছেন সেইসময়কালে আরবে এমনকি অনেকের মতে পৃথিবীর সাহিত্যের ইতিহাসে খুব কমজন পেরেছিলেন |
নারীকে বর্ণনা করেছেন এমন -(অনুবাদ)

"ঈষত্ বাঁকায়ে গ্রীবা সেই বর-নারী
আমাকে দেখালো তার গালের নরম; অত:পর
তাকালো আমার.পানে, লাজ নম্র চোখের চাহনি |
বনের হরিণী সে-ও হার মানে যেন
মায়াময় সেই চাহনিতে"

"অনেক কুমারী নারী মুরগির ডিমের মতো
দাগহীন দেহের সৌষ্ঠব, আর কোনোদিন ভুলে
যাদের তাবুতে অন্য পুরুষের পদক্ষেপ পড়ে নি কখনো-
নির্বিঘ্নে করেছি খেলা সেইসব.রমণীর সাথে"
(অনুবাদ)

শুধুমাত্র তাই নয় ব্যথা বিরহ ও খুব সুন্দর প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কাব্যে |

"আমি যখন ই কোনো বঁধুকে বলেছি- সে ভালো
তাকে দেখলেই পরাণ জুড়ায়, তখনি তাকে আর পাইনি!
আমার কপাল! আমার সাহচর্য্যে যেই আসুক না কেন,
হয় সে বদলে গেছে নয় তো হারিয়ে গেছে"

"তুমি তো বিরহ বিচ্ছেদের কারণ
বিষণ্ণ এতো ভগ্ন হৃদয় যে-
প্রেমের পথ ভুলে অন্য পথ ধরেছো"(আলকামা)

এই সময়ের কবিদের রচনাকে 'মুআল্লাকা' বলা হতো | যার অর্থ ঝুলন্ত কবিতা | সেই সময়ের নিয়ম ছিলো সেরা কবিদের সেরা কবিতাগুলো কাব্বা ঘরের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা | সেই থেকেই নাম 'ঝুলন্ত কবিতা' বা 'মুআল্লাকা'

এই মুআল্লাকাই ইমরুল কায়সের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি | যাতে তিনি রচনা শৈলি, প্রকাশ ভ ঙ্গী, অনুপম সুরা গজল রচনা, গুনকির্তন ও উপমা-উত্প্রেক্ষায় সমগ্র শক্তি নিয়োজিত করেছিলেন | তার সৃষ্টি শুধু জীবনের কথা নয় শিল্প নিপুনতার রাজকিয় প্রদর্শন |

এবার মূল আলোচনায় আসি - এই কবি প্রেমে.পড়েছিলো উনায়যা নামের এক মেয়ের | সমাজ কিন্তু  চিরদিন ই প্রেমে বাঁধা দিয়েছে, দেয় (হয়তো)দেবেও!
স্হানীয় লোক সমাজ উভয়কে সান্নিধ্য আসতে দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলো না | সমাজ চায়তোনা কাব্য চর্চা হোক উনায়যা নিয়ে | জাহেলি যুগে শিক্ষায় গ্রহন করতে চায়তো না | জাহেলি যুগ মানে অন্ধকার কাল | সেই সমাজে প্রেম এবং তা কেন্দ্র করে কাব্য রচনাও ছিলো কলঙ্কের কারণ! 
কবি কিন্তু লোক চক্ষুর অন্তরালে দেখা করতেন প্রেমিকার সাথে |
একদিন এক সুযোগ পেয়ে গেলেন কবি প্রেয়সীর সাথে সময় কাটানোর দেখা করার | গোত্রের লোকেরা স্থান বদল করবে দলবদ্ধ হয়ে (প্রায়.মিছিলের মতো জাকে বলা হয় কাফেলা) | কাফেলার নিয়ম অনুযায়ী পুরুষরা সামনে আর নারীরা পেছনে পেছনে | কবি অতি চালাকির সাথে পুরুষ স ঙ্গ ত্যাগ করে কাফেলার পেছনে হয়ে মেয়ে-নারীদের পেছনে পেছনে পথ চলা শুরু করলেন |
পথিমধ্যে এক জলাশয়ে (দারাত জুলজুল) মহিলাদের নজর এড়িয়ে কবি পৌঁছে গেলেন এবং লুকিয়ে লুকিয়ে নারীদের নগ্ন স্নানের দৃশ্য উপভোগ করতে থাকেন তারিয়ে তারিয়ে এবং পোশাকগুলো লুকিয়ে রাখলেন নিজের কাছে| তখনকার নিয়মে মহিলারা পাড়ে পোশাক রেখে নগ্ন হয়ে স্নান করতেন | এত'র মাঝেও মূল কেন্দ্র হলো সেই 'উনায়যা' | স্নান শেষে মহিলারা পোশাক আনতে গেলে তখন সকলেই বুঝলো যে -এই বলো কবির কান্ড | মহিলারা সবাই দুই হাতে বিশেষ দুই অ ঙ্গ আড়াল করে কবির কাছে পোশাক চায়লে কবির প্রস্থাত "নগ্ন অবস্থায় সবাইকে একে একে আসতে এবং কাপড় নিয়ে যেতে হবে"
যেহেতু স্থানান্তরের সমস্যা দলছুট হলে আরো অনান্য সমস্যা বড়বে, উপায়ন্তর না দেখে উন্মুক্ত বসনা রসে পুরা আঁখের মতো, চামড়ার দড়ির মতো এক অসাধারণ দেহের ও হরিণের মতো চোখের অধিকারীনি নারী এসে পোশাক নিয়ে যায় |কবি সেই সোন্দরয্য প্রাণভরে দুইচোখে উপভোগ করেন |
(এখানে ভারতীয়রা "বল রাধা স ঙ্গম হোগা কি নহি" রাজকাপুরের সিনেমার গানটি কল্পনা করতেই পারেন)
অনেক অনেক বিশারদগন আবার এই কবির সাথে ব্যক্তি এবং কাব্যে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করে থাকেন |
আলোচনার শেষ কবির আরেকটি কবিতার অনুবাদ দিয়ে শেষ করছি -
(কাব্যানুবাদ : মাহমুদুল হাসান নিজামী)
থাম বন্ধুরা-থাম একটু খানি
প্রিয়ার বসত স্মৃতি দেখে কেঁদে মুছি বিরহের গ্লানি
দাখুল-হাওমাল-তুজিহ-মিক্বরাতের মধ্যিখানে
বালির টিলার শেষ প্রান্ত যেখানে

যে টিলার ওপর
উত্তরীয় বায়ু বয়ে আনে বালির স্তর
দক্ষিনা বায়ু সে কৃত্রিম স্তর মুছে
নিয়ে যায় পুরোনো স্মৃতির কাছে

প্রিয়ার বসত ভিটার প্রাঙ্গণ ভূমিতে সমতল-
হরিণের লেদ ছিটিয়ে আছে গোলমরিচের মতো অবিকল
বসত ছেড়ে যখন যাত্রা করেছিল প্রিয়া
সেই বিরহী প্রভাতে
আমি বাবলা বৃক্ষের কাছে দাঁড়িয়ে-
হালযাল চূর্ণকারীর ন্যায় ছিলাম অনবরত অশ্রুপ্রাতে

সহযাত্রীরা তখন স্বীয় সওয়ারী থামিয়ে সান্ত¦নার বাণী শোনায়-
ধৈর্য কর ধারণ-অধৈর্য নিয়ে যায় ধ্বংসের কিনারায়
অথচ অশ্রু বিসর্জনেই প্রশান্তি নেমে আসে হৃদয় গহীনে
কান্নার কাছে সমর্পিত হই সেই কারণে

প্রিয়া উনাইজার সাথে তোমার সেইই লীলাখেলা
মাছুল পর্বতে ইতিপূর্বে যা হয়েছিল অবলীলা-
প্রিয়া উম্মুল হুয়াইরিছ এবং তার প্রতিবেশীনি রোবাবের সাথে
উনাইজার ব্যবধান কোথায় তাতে
(কবি নিজকে বুঝ দিয়ে)

যখন তারা দাঁড়াতো দেহ থেকে কস্তরী সুরভীত সমীরণ
হৃদয়ে ছড়াতো বিচ্ছুরণ
তখন বিরহ জ্বালা ভীষণ
অশ্রুতে ভাসিয়ে দিয়েছিলো নয়ন
গলায় ঝুলন্ত তরবারী বেয়ে
অবিরাম ঝরছিল অশ্রুধারা সিক্ত হয়ে

জীবনের বহুদিন হাজারো রমণীর মায়ায়
কিন্তু সেই ‘জুলজুল’ এর স্মৃতিময় দিন
এখনো চির রঙিন
উজ্জ্বল জ্যোতির মতো ফুটে আছে
স্বর্গীয় অনুভবে হৃদয় ক্যানভাসে।"

*তথ্য - আরবী সাহিত্যের ইতিহাসের কিছু বই-পত্র, তালিম-- আবু রিদা (কোলকাতা), দৈনিক সংগ্রাম(খবরের কাগজ--বাংলাদেশ) ||

**কেউ যদি আমার লেখা থেকে প্রথম এগুলো জানলেন তবে আমার নাম অবশ্যই উল্লেখ করবেন বক্তব্যে বা লেখনিতে | জ্ঞান উত্সের অস্বীকারী চির পতিত**
****2016সালের আজকের দিনে ***

No comments:

Post a Comment