Monday, 15 May 2017

গল্পাংশ

- মণি জুয়েল(Moni Jewel)

ওয়াহাব মাস্টারের বড় মেয়ে দুই বছর হলো পড়াশুনো ছেড়েছে ..পড়াশুনায় খুব ভালো না হওয়ার কারণে সেকন্ড ইয়ারের পরে আর এগোতে পারেনি | Sociology সাবজেক্টে ব্যাক করেছিলো |
যদিও সুন্দরী মেয়ে তবুও বাবার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই মেয়েকে নিয়ে...শতই হোক মেয়ের বাবা তো!
এখন আপ্রাণ চেষ্টা- যেমন করে হোক মেয়েকে ভালো পাত্রের হাতে দিতে হবে আর তা পারলে শান্তি আসে!
যেহেতু তিনি শিক্ষক সেই কারণে শিক্ষক পাত্রের প্রটি দূর্বলতা তাঁর আছেও|

এই শিক্ষক পাত্র খুঁজতে গিয়ে অনেক পাত্রকে তিনি নাও করেছেন..আবার অনেক শিক্ষক পাত্র লেনদেনের কারনে বিয়ে পর্যন্ত এগোতেই পারেন নি ; কেউ চেয়েছেন দামি চারচাকা তো কেউ দশ-বিশ লাখ টাকা উপহার হিসেবে !! আর এতেই যেন আর খানিক চাপ বেড়েছে ওয়াহাব মাষ্টারের মুখখান অনকে খানি চুপসে গেছে ..শরীরটাও তেমন আর ভালো যাচ্ছেনা 
আর বাবার এমন অবস্থা দেখে মেয়েও অগোচরে তিলে তিলে নিজেকে দমিয়ে চলেছে ; কতরাত আধঘুম কাটিয়েছে তার অন্ত নেয় |

রবিবারের সকালে পেপার হাতড়াচ্ছেন মাস্টার মশাই হন্যে হয়ে চলছে খোঁজ
তখনি পড়শি মেহতাব সাহেব এসে খবর দিলেন যে- রংপুর গ্রামের এক পাত্রের ; পাত্র তারাপুর হাইস্কুলের ইংরেজির টিচার...লেনদেন ইচ্ছেমতো | তবে মেয়ে ধার্মিক হ ওয়া চায় |
মাষ্টার-মশাই মেহেতাব সাহেবকে বললেন -
যাও ভালো করে খবর নিয়ে এসো এবং দরকারে বলে এসো  মেয়ের খবর |
মেহেতাব সাহেব বললেন -আমি গিয়ে খবর দিচ্ছি, কি হলো না হলো আপনাকে ফোনে জানিয়ে দেবো |
মেহতাব সাহেব চলে গেলেন
মাষ্টার মশাই মনে মনে কত সুখ যে কল্পনা করলেন এই কয়েক মূহূর্তে তা বলে বোঝানা যাবেনা ; যাঁরা মেয়ের বাবা তাঁরাই হয়তো বুঝবেন |
দুপুরে খবর এলো - পাত্র আজ বিকেলেই স্কুল ফিরতি পথে পাত্রি দেখে নেবেন |
আয়োজন শুরু হলো মিষ্টি..চানাচুর ..আরো হরেক আধুনিক খাবারের ---টিচার জামাই বলে কথা !
বিকেলে তিনটে থেকেই মাষ্টার মশাই আর তাঁর গিন্নী বারান্দার জানালার পাশে বসে পথের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন |
সাড়ে চার নাগাদ দুটো বাইকে চেপে দুজন এলেন সাথে মেহেতাব সাহেব |
ওয়াহাব সাহেব বেশ গভীর ভাবে মাষ্টার মশাই নজরে একবার দেখে নিলেন দুইজনের দিকে;  |
ঘরে আসতে বললেন সালাম কালাম হলো; বসতে বললেন |
সবাই আপন সিটে বসলে ;মেহেতাব সাহেব ইশারাই ওয়াহাব মাস্টারকে আড়ালে ডেকে বোঝালেন কোনজন পাত্র ;খানিক বিবরণ হয়ে গেলো !
পাত্র দেখতে মোটামুটি ভালোই -গায়ের রং একটু চাপা...সাজ গোজে আধুনিকতা আছে তবে আধুনিক ইসলামী ধাঁচের ; পায়ের গিটের উপর পর্যন্ত প্যান্ট..রুচিসম্মত শার্ট ..শরীর থেকে সুন্দর সুগন্ধ বের হচ্ছে মনে হয় বিদেশী কোম্পানীর আর নাহলে খুব দামী প্রোডাক্ট |

আলাপ পর্ব হবার পরে..প্লেট এলো কয়েক রকম খাবারের সাথে কয়েক রকম ফল সাথে কোল্ড ড্রিংক আরো কত কি!

খাওয়া শেষে মেহেতাব সাহেব বললেন-
পাত্রিকে নিয়ে আসুন ..সাঁঝ প্রায় হল..হলো

পাত্রির ভাই ওয়াইশ দিদিকে সাথে নিয়ে এলো -
পাত্রি সালাম দিলো , অনুমতি পেয়ে আসন গ্রহন করলো |
জামাইয়ৈর সাথে আসা ভদ্রলোক জানতে পাত্রীকে প্রশ্ন করলেন -নাম ধাম,পড়াশুনা..বিভিন্ন  আর কত কি ;
কতক উত্তর এলো কতক এলোনা |
এবার পাত্র নিজেই প্রশ্ন শুরু করলো - নামাজ পড়ো
পাত্রি-হ্যাঁ
আরো অনেক কথা হলো |
পাত্রীর হাতে পাঁচশো টাকা প্রথামত দিয়ে পাত্রীকে আসতে বললেন |

পাত্রীর বাবা ওয়াহাব সাহেব মেহেতাব সাহেব এবং অতিথি দুজনের এবার কথা বলা শুরু হলো |
কথা প্রস ঙ্গে কথা উঠে এলো  পাত্রের পক্ষ থেকে -
মেয়ে পর্দার জীবন যাপন করতে হবে ...সাজাগোঁজা জীবনের বদলের সাধারণ জীবন যাপন করতে হবে আর কত ধর্মীয় মানা ইত্যাদি |
ওয়াহাব সাহেব হাসিমুখে সব শুনে চলেছেন -হরেক ফরমান
পাত্রীর বাবা তো ...তাও আবার টিচার জামাই বলে কথা !
কথাগুলো আড়াল থেকে পাত্রী শুনছিলো ..আর আপনার কপাল ..বাপের আকুতি নিয়ে ভাবছিলো ..অজান্তেই কবেই যেন দুফোটা জল চোখের কোন দিয়ে বয়ে গেলো |
অতিথি বিদায় করে মাষ্টার মশাই ঘরে এসে ব্যথাতুর হৃদয়ে  মেয়ের মাথায় আদরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন …
বলতে শুরু করলেন কত কথা -মেয়েকে কেমণ করে বড় করলেন, কত আদরে খাইয়ে পরিয়ে পড়িয়ে স্বাধীনভাবে; আর আজ মেয়ের বিয়ের সময় কত যে শর্ত !!
এ শর্ত শুধু তোকে নয় রে মা ..এ আমার উপরেও ! আমাকেও আজীবন মেনে চলতে বাধ্য হতে হবে যে!!
বলতে বলতে গলা যেন ভিজে এলো!!
মেয়ের বাবার হাত চেপে ধরে বললো - কান্না ভেজে গলাই বললো -
-বাবা তুমি তাকে একবারও কি জানতেচাইলে যে সে সাধারণ জীবন যাপন করে কি না , সে  নিজেকে পর্দায় রাখে  কি না, 
সে তো ফুলবাবু !!!!
ওখানে শুধু আমাকে সব বিসর্জন দিতে হবে বাবা...
বাবা বড় একতা শ্বাস ফেলে বললেন - তুই যে ওখানে দুদানা সুখে খাবি রে মা!
আমি মরবো তখন ভাববো -আমার সেই মিস্টি আদরের সোনা ভালো আছে ..দুটো খেতে পায়...ভালো পরতে পায় !!!
বাবা-মেয়ে দুজনের চোখ দিয়ে অশ্রু বর্ষন হয়ে গেলো |

দিন তিনেক পরে পাত্রের তরফ থেকে ফোন এলো কথা বললেন
পাত্রীর মায়ের সাথে পাত্রের মা
আপনার তাগিদেই পাত্রীর মা জানতে চাইলেন বেয়ান সম্বধোন করে-
বলুন বেয়ান - আপনাদের কথা
উত্তর এলো -আমরা আর কি বলবো,.লেনদেন তেমন নয় আমাদের ....একটু ইবলিশ হাসি হেসে !
ছেলে তো কিছুই তেমন চায়না ..আমরাও তেমন না ...তবে এই দুছর হলো চাকুরি পেয়েছে বাড়ি তেমন করে উঠতে পারিনি --অনেক খরচ আবার একটু হাসি হেসে বুঝিয়ে দিলেন তার..তাদের চাওয়া ...
কথা বলতে বলতে কথা এলো -
আপনারা আপনার মেয়েকে যেমন সাজিয়ে পাঠাবেন তার ঘর তেমন সাজবে ;
হটাত্ ফোনটা কেটে গেলো..নেট-ওয়ার্ক দুর্বল |

****16.05.15-ধুলিয়ান- দুপুর 01:20*****

No comments:

Post a Comment