যে কোনো রাজনৈতিক চেঞ্জ (বিপ্লব) আসার আগে তার সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চেঞ্জ দরকার। এ নতুন কথা নয়। আমাদের উপমহাদেশে লোকের কাছে যারা মার্ক্সবাদী তার বিপ্লবের পথে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা একটু বেশি বলেন অন্যদের চেয়ে। তাঁরা বলেন লেনিন, তারা বলেন মাও'র কথা। গ্রমসির কথা তেমন শুনতে পাই নি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটে নি। কেন? কারণ বিশেষ কিছু অধ্যায় পার করে তবে তা সম্ভব। তাছাড়া ওদের কার্যাবলী খুব সন্দেহজনক। অনেকসময় ভণ্ডামী ছাড়া কিছুই মনেহয় না। এটা আমার নিজস্ব মত।
যাইহোক...
যদিও বহু ধর্ম (মতাদর্শ) দেখতে পাই তবু আমাদের উপমহাদেশে আজ পর্যন্ত যে বাদ(ism)টা ভালো করে জানে তা হিন্দুবাদ (ধর্ম অর্থে না ধরে, সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক অর্থে ধরুন, আমি আর অন্য কোনো অর্থে বলছি না। এই লেখার যেখানেই হিন্দু শব্দটা পাবেন জানবেন প্রচলিত ধর্ম অর্থে বলছি না)। এ উপমহাদেেশ, এখনকার তথাকথিত উন্নত বিশ্বের মতো, রাজা ঈশ্বরের পুত্র এমন ব্যবস্থা দেখেন নি ১০০০ বছরে, এরা ফ্যাসিবাদ দেখেন নি, এরা সারাসরি পুঁজিবাদও দেখেন নি, সমাজবাদ তো কল্পনা। যেটা দেখেছেন তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন করে যাচ্ছেন আজও। সামাজিক বিপ্লবও ঘটেছে, উপমহাদেশের বিশাল অংশের মানুষ সেই অতীতের হিন্দু সমাজ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে নিজেদের সামাজিক জীবনে বদল এনেছেন ধর্ম(মানে ব্যাক্তিগত ও সামাজিক জীবন) বদলের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সাংস্কৃতিক চেঞ্জ সেভাবে আসে নি। আজও পুরোনো সংস্কার ধ্যান ধারণা চালু আছে, ধর্ম যাই হোক। এখন উপমহাদেশ বলা যায় তিন ভাগে বিভক্ত। এটাকে রাজনৈতিক ভৌগোলিক ভাগ বলা গেলেও তা রাজনৈতিক বিপ্লবের পর্যায়ে যায় নি। ফলে এখনকার ভারত ছাড়াও আরো দুটো দেশেও অসন্তোষের শেষ নেই। একটা জগাখিচুড়ী অবস্থা।
এরই মধ্যে ইউরোপে অনেক চেঞ্জ এবং উপনিবেশবাদের কারণে পরস্পর বিরোধী অনেক কিছুই দেখা যায়। আরও বহুবিধ ধ্যান ধারণার প্রচার প্রসার ঘটে। ফলে কোন দিক থেকে কোনদিকে যাবে এমন একটা এলোমেলো অবস্থা। এবং ছুটে যাওয়ার বাধ্যবাধকতাও আছে। এই এলোমেলো অবস্থার কারণ মানুষের আজও কালচারাল অবিকাশ। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক অবিকাশও। বলা যায় এক দফায় ইসলামের মাধ্যমে সামাজিক বেশ বড়সড় কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। যেমন আরো অতীতে বৌদ্ধ ও জৈন মতাদর্শের মাধ্যমে হয়েছিলো। তার বেশি কিছুই হয় নি, দলাদলি ভাগাভাগি ছাড়া।
আর এই না হওয়ার পেছনে অনেক কিছু কারণ আছে। সবচেয়ে বড়ো যে অভাব তা হলো নেতার অভাব। এখন আপনরা বলবেন - এদেশে কি তাহলে নেতা জন্মান নি? আমি বলবো উপমহাদেশে Special নেতা মাত্র কয়েকজন এখন পর্যন্ত। নেতা মানে শুধু অফিসিয়াল পণ্ডিত এমন কথা বলছি না, বলছি পূর্ণ জননেতার কথা। মানুষের নেতার কথা। তারা মাত্র কজন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বাবা সাহেব আম্বেদকর, নেতাজি, মিস্টার জিন্নাহ্। তাদের মত পথ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু তারা মানুষের নেতা।
তার পরে থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের উপমহাদেশে অনেকে নেতা এসছেন কিন্তু মানুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক নেতা তেমন আর পাই নি। আজ পর্যন্ত আমরা এখনকার ভারতীয়রা সাধারণত মূলত আম্বেদকরের কর্মের ফলেই যা কিছু এগিয়ে আছি রাজনৈতিক জাগরণে। ১৯৪৭ সালের পর জিন্নাহ আর ভারতীয়দের নেতা নন। কিন্তু নেতাজি এখনও ভারতীয় সবার নেতা। যদিও তাঁকে পুরোপুরি কেউই জানতে পাই নি আমরা। এছাড়াও আমাদের উপমহাদেশে আরও উল্লেখযোগ্য বীর যেমন ভগৎ সিং, আশফাকুল্লাহ, নিসার আলী স্মরণীয়। তারা মানুষের জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন, যা আজও আমাদেরকে সংগ্রামের পথে এগিয়ে যেতে শক্তি দেয়।
আরও মনেকরি এদেশে যদি সত্যিই বিপ্লব ঘটে তবে মুসলমানদের মধ্যে থেকেই ঘটবে, কিন্তু তারা শিক্ষা থেকে আজও বঞ্চিত। যেদিন তারা শিক্ষিত হবে তারাই বিপ্লব ঘটাবে। কারণ তারা ইতিপূর্বে সমাজ বিপ্লব ঘটিয়েছে। তারা কি পারবে? এটা বড় প্রশ্ন। কারণ বৌদ্ধ ও জৈন রা সমাজ বিপ্লব ঘটিয়ে ও অত্যাচারের কাছে শেষে পরাজিত হয়েছে।
যাইহোক... মানুষ ভালো থাকুক। আমাদের মধ্যে থেকেই একদিন মানুষের নেতা মাথা তুলে দাঁড়াবে। সবাকে ভালোবাসা, Love You ❤️. @Moni Jewel
#ব্যক্তিগত_মতামত